Skin Cancer Causes, Symptoms and What To Do.
ত্বকের ক্যান্সার এ আক্রান্তের হার নেহায়েত কম নয়। ক্যান্সার সমূহের মধ্যে সমস্ত পৃথিবীতে আক্রান্তের হারের দিক থেকে এর অবস্থান ১৭ তম। আমাদের দেশে বাৎসরিক আক্রান্ত হার কত এ বিষয়ে পরিসংখ্যান না থাকলেও, বর্তমান সময়ে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়ে চলছে।
ত্বক ক্যান্সারের প্রধান কারণ সুর্যের অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ। যারা দীর্ঘক্ষন সরাসরি সূর্যের আলোতে কাজ করেন যেমন- কৃষিকাজ তাদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় যেমন-
১। অতিরিক্ত ফর্সা ত্বক ।
২। বয়স- মধ্যবয়স্ক থেকে বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে সংক্রমনের হার বেশি ।
৩। ধূমপান ও তামাক সেবন ।
৪। ভাইরাস যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এর সংক্রমণ থেকে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা হতে পারে ।
৫। পরিবেশগত কারণ বা এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর- যেমন আয়োনাইজিং রেডিয়েশন, এক্স রে, আর্সেনিক, হেভি মেটাল জাতীয় যৌগ প্রভৃতির সান্নিধ্যে থাকা ।
৬। দীর্ঘ দিনের জটিল ঘা বা ক্ষত ।
৭। জেনেটিক ফ্যাক্টর ।
১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এরকম ওষুধ প্রভৃতি ।
প্রধান ত্বক ক্যান্সারের ধরন (Skin Cancer Causes, Symptoms and What To Do.) :
মোটা দাগে ত্বকের ক্যান্সার গুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১। মেলানোমা ক্যান্সার
২। নন মেলানোমা ক্যান্সার
মেলানোমা ক্যান্সার বলতে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমাকে বোঝানো হয়।
নন মেলানোমা ক্যান্সার বলতে মূলত ব্যাসাল সেল কারসিনোমা এবং স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা কে বুঝানো হয়। ত্বকের ক্যান্সার সমূহের মধ্যে এই তিনটি ই প্রধান ক্যান্সার। এ ছাড়াও মার্কেল সেল কারসিনোমা, সিবাসিয়াস কার্সিনোমা হয়ে থাকে তবে এর হার খুবই অল্প।
ব্যাসাল সেল কারসিনোমা (Basal cell carcinoma) :

Basal cell carcinoma
ত্বকের ক্যান্সার সমূহের মধ্যে ব্যাসাল সেল কারসিনোমা বা BCC সবচেয়ে কমন। এটি খুব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর বিভিন্ন ধরণ আছে, যাদের মধ্যে নডিউলার ভ্যারাইটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আক্রান্ত স্থানে গুটির মত শুরুতে দেখা দেয়, এবং আস্তে আস্তে এর উপর ক্ষতের সৃষ্টি হয়, এবং সেই ক্ষত আক্রান্ত স্থানের ভেতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইঁদুর যেভাবে গর্ত খুড়ে থাকে অনেকটা সেভাবে আক্রান্ত স্থানের ভেতরের দিকে ছড়িয়ে প্রবণতার দরুন একে ‘রডেন্ট আলসার’ ও বলা হয়ে থাকে। সাধারন ভাবে বয়স্ক ব্যক্তিরাই বেশি আক্রান্ত হন এবং ৮৫-৯০% ক্ষেত্রে হেড ও নেক এরিয়াতে এটি হয়ে থাকে। চোখের পাতা, গাল, কপাল, উপরের ঠোঁট এসব যায়গায় আক্রন্তের হার সবচেয়ে বেশি। ক্যান্সার হলেও এটির শরীরের দুরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পরার ঘটনা খুবি বিরল।
স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা (Squamous cell carcinoma) :

Squamous cell carcinoma
ত্বকের ক্যান্সার সমূহের মধ্যে দ্বিতীয় আবস্থানে রয়েছে স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা বা SCC। এটিও বয়স্ক ব্যাক্তিদের বেশি হয় এবং এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হবার গড় বয়স ৬৫ বছর। শরীরের মুখ, হাত, বুক, পিঠ, পা এসব স্থানে বেশি হয়। চামড়ায় লালচে ফুস্কুরি থেকে শুরু করে বড় ফুলকপির ফুলের মত বিভিন্ন ভাবে এটি প্রকাশ পেতে পারে এবং দ্রুত বড় হতে থাকে। ব্যাসাল সেল কারসিনোমার চেয়ে এটি বেশি আক্রমণাত্মক ধরনের হয়ে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যে শরীরের দুরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পরার প্রবনতা রয়েছে। দুরবর্তী স্থানের মধ্যে স্থানীয় লসিকা গ্রন্থি, ফুসফুস, লিভার, হাড় এবং মস্তিস্কে এটি ছড়িয়ে পরতে পারে। কাজেই দ্রুত রোগ নির্নয় এবং চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা (Malignant melanoma) :

Malignant melanoma
ত্বকের ক্যান্সার সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হল ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা। যদিও এটি সমস্ত ত্বকের ক্যান্সার এর মাত্র ৪%, তথাপি ত্বক ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুর প্রায় ৭৫% ই হয় ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার কারণে। ত্বকের মেলানোসাইট নামক এক ধরনের কোষ থেকে এর উৎপত্তি। শরীরের ধর, হাত, পায়ের গোড়ালি, মাথা, চোখ প্রভৃতি অঙ্গ বেশি আক্রান্ত হয়। এ ধরনের রোগীরা সাধারণত তাদের শরীরে আগে থেকে থাকা তিল, বা জন্মদাগ, বা অন্য কোন ত্বকের সমস্যা থেকে তাদের রোগ হয়েছে বলে হিস্ট্রি দিয়ে থাকেন। স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমার মত এটিও দুরবর্তী স্থানে ছড়ায়।
Skin Cancer Causes, Symptoms and What To Do.
কখন সতর্ক হবেন এবং চিকিতসকের পরামর্শ নিবেন? (When to be cautious and seek medical advice?)
ত্বক ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে সতর্ক থাকতে হবে। ত্বকে আকস্মিক কোন পরিবর্তন দেখা দিলে বিশেষ করে মুখমন্ডলে কোন ধরনের চাকা দেখা দিলে, দীর্ঘদিন ধরে থাকা কোন চাকায় হঠাত ব্যাথা হলে, ক্ষতের সৃষ্টি হলে, শরীরের কোন স্থানের ক্ষত কয়েক মাসেও না শুকালে, তিল বা আচিল এ হঠাত পরিবর্তন হলে যেমন- খুব দ্রুত বড় হয়ে যাওয়া, রঙের আকস্মিক পরিবর্তন, হঠাত করে এর আকৃতিগত পরিবর্তন, ব্যাথা হওয়া, অতিরিক্ত চুল্কানো এবং এর ফলে রক্তপাত হওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে দ্রুত একজন চিকিতসকের পরামর্শ নিবেন। প্রাথমিক ভাবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। ওষুধ খাবার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে সার্জারী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
রোগ নির্নয় (Diagnosis) :
বায়োপসি করে ত্বক ক্যান্সার নির্নয় করা সম্ভব। বায়োপসি করে ক্যান্সারের ধরণ,কোন পর্জায়ে আছে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
চিকিতসা (Treatment) :
ত্বক ক্যান্সার চিকিৎসার বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। সঠিক চিকিৎসার জন্য রোগ নির্নয়ের পর মাল্টিডিসিপ্লিনারী এপ্রোচ এর মাধ্যমে চিকিৎসা এগিয়ে নিতে হবে। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ক্রায়োথেরাপি, ইলেক্ট্রোকিউরেটেজ, সার্জারীর মধ্যে থেকে রোগীর অবস্থা, পছন্দ,সর্বপরি রোগের জন্য যেটি সর্বোত্তম হবে এরকম একটি পদ্ধতি বেছে নেয়া উচিত।
প্রতিরোধে করনীয় (What can be done to prevent) :
ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে নিম্নের ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে-
১। সরাসরি সুর্যালোক পরিহার করতে হবে- বিশেষ করে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্জন্ত যখন সুর্যের তাপ প্রখর থাকে তখন ছায়ায় থাকার চেস্টা করতে হবে ।
২। বাইরে বের হলে অবশ্যই সান স্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা উচিত। কমপক্ষে SPF 30 মানের লোশন ব্যবহার করতে হবে যেটি সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি কে বাধা দিতে সক্ষম।
৩। বাইরে বের হলে শরীর ভাল ভাবে ঢেকে বের হতে হবে যাতে সুর্যের আলোকে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ ক্ষেত্রে ভাল মানের সানগ্লাস, হ্যাট, ছাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। রেডিয়েশন জোন এ যারা কাজ করেন তাদের রেডিয়েশন থেকে সুরক্ষার জন্য গগলস, শিল্ড ব্যবহার করতে হবে ।
৫। আর্সেনিক মুক্ত পানি পান ও ব্যবহার করতে হবে।
৬। হেভি মেটালের সংস্পর্শে থাকতে হয় এরকম পরিবেশে যারা কাজ করেন যেমন রঙের ফ্যাক্টরি তাদের গ্লাভস, প্রটেক্টিভ গিয়ার ব্যবহার করতে হবে।
৭। জটিল ও পুরাতন ক্ষতের চিকিৎসায় বিলম্ব করা যাবে না।
৮। সর্বোপরি নিজের ত্বকের যত্ন নিতে হবে, ত্বকে কোন ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত চিকিতসকের পরামর্শ নিতে হবে ।
ত্বকের সমস্যা সমাধানে একজন স্কিন বিশেষজ্ঞ বা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি ত্বকে অস্বাভাবিক র্যাশ, চুলকানি, ব্রণ, পিগমেন্টেশন, শুষ্কতা বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো যা সাহায্য করতে পারে:
স্কিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার সময় (When consulting a dermatologist) :
সমস্যার বর্ণনা স্পষ্ট করুন: কবে থেকে সমস্যা শুরু হয়েছে, ত্বকের কোন অংশে সমস্যা বেশি, এবং পূর্বে কোনো চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে কিনা তা বলুন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিন: আগের প্রেসক্রিপশন, ব্যবহৃত ক্রিম বা মেডিসিনের নাম নিয়ে যান।
আলোচনা করুন: আপনার জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, এবং ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত প্রোডাক্ট সম্পর্কে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
Skin Cancer Causes, Symptoms and What To Do.
সাধারণ পরামর্শ (General Advice) :
পরিষ্কার রাখুন: ত্বক প্রতিদিন হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করুন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন: সূর্যের রশ্মি থেকে সুরক্ষা পেতে নিয়মিত সানস্ক্রিন লাগান।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: হাইড্রেটেড থাকুন।
Code : 4024
প্রাকৃতিক উপাদান: কম রাসায়নিকযুক্ত এবং প্রাকৃতিক স্কিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
খাদ্যাভ্যাস: ত্বকের জন্য উপকারী ফল, শাকসবজি, এবং পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
আরো বিস্তারিত জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন–
Skin Cancer Causes, Symptoms and What To Do.